বাংলাদেশের চলতি শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যবইয়ে কিছু বিতর্কিত পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার মধ্যে “আদিবাসী” শব্দটি ব্যবহার নিয়ে বিশেষ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে কিছু বিষয় পরিবর্তন করা হয়েছে, যেমন গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস, শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন নিয়ে কিছু অধ্যায় বাদ দেওয়া এবং রাজনৈতিক নেতাদের নামের পরিবর্তন। এসব পরিবর্তন থেকে সংঘর্ষ ও প্রতিবাদ হয়েছে, বিশেষ করে “আদিবাসী” শব্দটি নিয়ে।
গত বছরের ছাত্র আন্দোলনের পর, নতুন পাঠ্যবইয়ে গণঅভ্যুত্থান এবং শেখ হাসিনার সরকার পতনের বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়। তবে, অনেকের দাবি ছিল, এই বইগুলোতে আওয়ামী লীগ কিংবা শেখ হাসিনার নাম বাদ দেওয়ার কারণে ইতিহাসের ভুল বর্ণনা হচ্ছে। কিছু বইয়ে জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনে নিহতদের নামের তালিকায় ভুল দেখা গিয়েছে। ফলে কিছু বইয়ে সংশোধনও আনা হয়েছে, তবে কিছু বিতর্ক এখনও চলছে।
এনসিটিবি (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেছেন, “বিতর্ক দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য থেকেই উঠে আসে, যা সহনশীলতার মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, এই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে কোনো রাজনৈতিক চাপ ছিল না, বরং আমলাতান্ত্রিক চাপের কারণে এসব পরিবর্তন করা হয়েছে।
এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে “আদিবাসী” শব্দটি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা গুরুত্বসহকারে নেয়া হয়েছে। “আদিবাসী” শব্দটি একটি গ্রাফিতিতে লেখা ছিল, যা পরে বিতর্ক সৃষ্টি হলে তা বাদ দেওয়া হয় এবং নতুন গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়। এতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিবাদ এবং সংঘর্ষ দেখা যায়।
এছাড়া, পাঠ্যবইয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সংক্রান্ত কিছু অধ্যায়ও বাদ দেওয়া হয়েছে, এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে অনেকের মধ্যে সন্দেহ ও প্রশ্ন উঠেছে, যেহেতু পরিবর্তনগুলো নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ নয় বলে অভিযোগ উঠছে। শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এসব পরিবর্তন দেশের সঠিক ইতিহাস এবং শিশুদের শিক্ষার প্রতি অবজ্ঞা।
পাঠ্যবই পরিমার্জন সম্পর্কে সাজ্জাদুর রহমান (যিনি রাখাল রাহা নামে পরিচিত) বলেছেন, “আমরা যতটুকু সম্ভব সংশোধন করেছি, তবে কিছু ভুলের জন্য আমাদেরও দায়ী করা উচিত নয়। কিছু তাড়াহুড়া এবং আমলাতান্ত্রিক সমস্যার কারণে ভুল হয়ে গেছে।”
পরিমার্জন কমিটি এবং এনসিটিবি বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সহনশীলতার দিকে ঝোঁকছেন, তবে বিতর্কের বিষয়টি সংঘাতে রূপ নিলে তা পরিহার করার কথা বলেছেন।